Breaking
30 Dec 2024, Mon

কালীগঞ্জের মীরা বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইবাদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ

Advertisement

স্টিং নিউজ সার্ভিস:

নদীয়ার কালীগঞ্জ থানার মীরা বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সহ কয়েকজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ৯ ডিসেম্বর সোমবার অভিযোগ জানানো হয়েছে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে। কালীগঞ্জের ভুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ মহম্মদ মাইনুল ইসলাম (৪২), একজন সাধারণ নাগরিক, অভিযোগ করেছেন যে তিনি চরম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মাইনুল ইসলামের অভিযোগ, ২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বেলা ১১:৫৭ মিনিট নাগাদ জানকিনগর উত্তরপাড়া থেকে পলাশী ফুলবাগান মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে এই নির্মম ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনার দিন, মাইনুল ইসলাম মোটরবাইকের পিছনে চেপে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মীরা বাজারের বুলেট হোটেলের কাছে পৌঁছালে তিনি লক্ষ্য করেন যে, পুলিশ লরি চালকদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায় করছে। তিনি দাবি করেন, পুলিশ সন্দেহ করে যে তিনি মোবাইলে এই ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করছিলেন। কিন্তু পুলিশ মোবাইল ঘেঁটেও এমন কোনো ভিডিও পায় নি বলে মইনুলের দাবি।  

অভিযোগ অনুসারে, এক পুলিশ আধিকারিক অরুন কুমার দে তার মোবাইল কেড়ে নেন এবং তাকে মারধর শুরু করেন। পরে তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে আরও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। মাইনুলের অভিযোগ, ফাঁড়ির আরও দুই পুলিশকর্মী সঞ্জয় ঘোষ এবং ফাঁড়ির ইনচার্জ ওবাইদুর রহমান ওরফে ইবাদুর রহমান লাথি সহ নানাভাবে ব্যাপক মারধোর করে। বিশেষ করে লাথি মারেন মাইনুলের দুই কানে।  

অভিযোগকারী মাইনুল ইসলাম ( নীল জ্যাকেট, গলায় মাফলার), ডানদিক থেকে দ্বিতীয় জন
অভিযোগকারী মাইনুল ইসলাম ( নীল জ্যাকেট, গলায় মাফলার), ডানদিক থেকে দ্বিতীয় জন

নির্যাতনের ফলে গুরুতর আহত অবস্থায় মাইনুল ইসলামকে স্থানীয় মীরা পি.এইচ.সি-তে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হন এবং জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর না করেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর, মাইনুল ইসলাম তার কানে রক্তপাত এবং শ্রবণশক্তি হ্রাস অনুভব করেন। তার পরিবার তাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুলিশ সেখানেও হুমকি দিয়ে তাদের চলে যেতে বাধ্য করে। পরে, পরিবারের সদস্যরা তাকে বহরমপুর নিবেদিতা নার্সিংহোমে ভর্তি করেন, যেখানে চিকিৎসকরা জানান, তার দুই কান স্থায়ীভাবে ৭৫% ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাইনুল ইসলাম স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু তার দাবি, থানার পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাকে এবং তার পরিবারকে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর, এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তি এবং মাইনুল ইসলামের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি, মীরা ফাড়ির ইনচার্জ ওবাইদুর রহমান ওরফে ইবাদুর রহমানের মতো একজন দায়ত্বশীল অফিসার কি করে এমন ঘৃন্য কাজ করতে পারলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। অনেকে বলছেন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এই ধরনের অফিসার ভবিষ্যতে আরও বড় পদে আসীন হলে সাধারন মানুষের জীবনকে নরকে পরিনত করতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে।

অন্যদিকে, মীরা ফাড়ির ইনচার্জ এবাদুর রহমান স্টিং নিউজকে বলেন, ওকে কোনো মারধোর করা হয়নি। ওর অভিযোগ থাকলে অভিযোগ করুক। আমার রিপোর্ট আমি দেবো। আমি ওর মেডিলক্যাল করিয়েছি। মারধোর করলে তো মেডিক্যালে ধরা পড়তো।

এ ঘটনায় এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, পুলিশ সুপার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে ন্যায়বিচার দেবেন। পুলিশের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা নষ্ট করছে। তাই, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রশাসনের জন্য এখন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে অনেকে।  

অভিযোগ পত্র:

Advertisement
Developed by